বিজয়ার প্রণাম আজ কেবল একটা হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক ম্যাসেজ
ODD বাংলা ডেস্ক: আজ আর কেউ চিঠি লেখে না। কোথায় হারিয়ে গেল পোস্ট কার্ড, ইনল্যান্ড লেটার, এনভেলপ। জানি না, পোস্টাপিসে এখন এসব পাওয়া যায় কি না। সেই সময় বড়দের পাল্লায় পরে আমাদের ভাইবোনেদেরও বিজয়া দশমীতে চিঠি লিখতে হত। বড়দের প্রণাম জানিয়ে চিঠি লিখতাম আমরা। আজ আমার আপনার বাড়ির ছোটদের চিঠি লেখার কথা বলাই যাবে না। সেই প্রসঙ্গ উঠলেই ওরা বলবে, চিঠি? সে আবার কী?
আজকের দিনে ফেসবুক, হোয়াটসআপের যুগে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানানো এক সেকেন্ডের ব্যাপার। হরেক রকমের ‘বিজয়ার শুভেচ্ছা’ মার্কা স্টিকার পাওয়া যায়। ফেসবুক, হোয়্যাটসআপে চিপকে দাও। খেল খতম। পারলে ভিডিও লোড করে দাও। চিঠি ফিঠির আবার কী দরকার? ও সবের দিন ফুরিয়েছে। জীবন এখন জেটের গতিতে চলছে।
আগে ছিল যৌথ পরিবার। অনেক লোকের একটাই হাঁড়ি। বড়দের রোজগার ছিল কম। কিন্তু আন্তরিকতা ছিল অফুরন্ত। তাই বলে কি ভায়ে ভায়ে ঝগড়া হত না? জায়ে জায়ে মন কষাকষি হত না? নিশ্চয়ই হত। আবার সব মিটেও যেত। দশমীর আগে বাড়িতে নাড়ু, মোয়া বানানোর চল ছিল। বাড়ির মা, কাকিমা, ঠাকুমা রা দল বেঁধে বসে পড়ত গুড়ের পাক দিতে। দশমী যেতে না যেতেই লক্ষ্মীপুজোর প্রস্তুতি হত ঘরে ঘরে। ছোটবেলায় বিজয়াতে বাড়ি বাড়ি যাওয়া ছিল রেওয়াজ। বড়দের পায়ে ঢিপ করে একটা প্রণাম। তারপরে কাকিমা বা জেঠিমার আসার অপেক্ষায় থাকা। কতক্ষণে ভিতর থেকে তারা নাড়ু, নিমকি, মোয়া নিয়ে আসবেন। আজকাল সে সবও উঠে গেছে। একেবারে একশো শতাংশ নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি, এবারে আজ পর্যন্ত বিজয়া করতে কেউ কারও বাড়ি যায়নি। অবশ্য এর মধ্যে করোনার একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। তবে করোনার আতঙ্ক না থাকলেও এটা বলাই যায়, সেই চলটা ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে।
আগে ছিল যৌথ পরিবার। জেঠতুতো, খুড়তুতো , মামাতো, পিসতুতো ভাইবোনেরা পুজোর সময় একত্রিত হয়ে হই চই হত। এখন স্কেলিটন পরিবার। তুতো ভাইবোনদের ছেলেমেয়েরা চেনে না। অদ্ভুত এক দুঃসময় এখন।
যাক। আবার পুরোনো কথায় ফিরে আসি। কথা হচ্ছিল চিঠি লেখা নিয়ে। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে সে পাট উঠে গিয়েছে। যুগযুগ জিও ফেসবুক। তোমার জয় হোক। নাই বা থাকল চিঠি লেখা।
Post a Comment