হনুমান পূজা হলো হিন্দু ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পূজা, যা ভগবান হনুমানকে নিবেদিত। ভগবান হনুমান হিন্দু ধর্মের অন্যতম জনপ্রিয় দেবতা, যিনি শক্তি, সাহস, এবং ভক্তির প্রতীক হিসেবে পূজিত হন। তিনি রামায়ণের প্রধান চরিত্র এবং ভগবান রামের অনুগত ভক্ত হিসেবে পরিচিত। হনুমান পূজার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়মাবলী এবং পদ্ধতি রয়েছে, যা অনুসরণ করলে ভক্তরা পূর্ণ আশীর্বাদ পেতে পারেন।
১. পূজার প্রস্তুতি:
হনুমান পূজা করার আগে সঠিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পূজার স্থান পরিষ্কার করা, পবিত্র হওয়া, এবং পূজার সামগ্রী সংগ্রহ করা এ প্রক্রিয়ার অংশ।
পবিত্রতা: পূজা শুরু করার আগে স্নান করে পবিত্র হতে হয়। পূজার স্থানটি ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে এবং পূজার সময় সাদা বা কোনো পরিষ্কার পোশাক পরিধান করা উচিত।
পূজার সামগ্রী: পূজার জন্য দরকারি সামগ্রী সংগ্রহ করতে হবে, যেমন ধূপ, দীপ, ফুল, চন্দন, সিঁদুর, ফল, প্রসাদ, পঞ্চামৃত, জলের ঘট, তুলসী পাতা, এবং গঙ্গাজল।
২. পূজার স্থান:
পূজার জন্য একটি পবিত্র স্থান নির্বাচন করতে হবে। বাড়ির মন্দির বা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে পূজা করা যেতে পারে। পূজার স্থানে একটি পরিষ্কার আসন স্থাপন করতে হবে এবং তার ওপর হনুমানজির মূর্তি বা চিত্র স্থাপন করতে হবে।
৩. পূজার পদ্ধতি:
আবাহন: পূজা শুরু করার আগে হনুমানজিকে আহ্বান করতে হয়। ভক্তিভরে প্রার্থনা করে তাঁকে পূজার জন্য আহ্বান জানাতে হয়। "ওম হনুমতে নমঃ" মন্ত্র উচ্চারণ করে পূজার শুরু করা যেতে পারে।
অর্চনা: পূজার প্রধান অংশ হলো অর্চনা, যেখানে ভগবান হনুমানজির মূর্তিকে বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে পূজা করা হয়। প্রথমে মূর্তির ওপর গঙ্গাজল ও পঞ্চামৃত দিয়ে অভিষেক করা হয়। এরপর চন্দন, সিঁদুর, এবং তুলসী পাতা দিয়ে তাঁকে সাজানো হয়। ধূপ ও দীপ জ্বালিয়ে প্রদক্ষিণ করা হয়।
মন্ত্রোচ্চারণ: পূজার সময় "হনুমান চালিসা," "হনুমান অষ্টক," বা "রামরক্ষা স্তোত্র" পাঠ করা হয়। এগুলো ভক্তির সঙ্গে উচ্চারণ করলে হনুমানজির আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
প্রসাদ নিবেদন: ভগবান হনুমানজিকে ফল, মিষ্টি, এবং অন্যান্য প্রসাদ নিবেদন করতে হয়। প্রসাদ নিবেদন শেষে পূর্ণ ভক্তিভরে প্রার্থনা করতে হয়।
আরতি: পূজার শেষ পর্যায়ে হনুমানজির আরতি করা হয়। আরতি করার সময় "জয় হনুমান জ্ঞান গুণ সাগর" অথবা "শ্রী রামচন্দ্র কৃপালু ভজ মন" গানটি গাওয়া যেতে পারে।
৪. বিশেষ নিয়ম:
শনিবার ও মঙ্গলবার: হনুমান পূজার জন্য শনিবার এবং মঙ্গলবার বিশেষ শুভ দিন হিসেবে বিবেচিত হয়। এই দিনে বিশেষ পূজা করলে ভক্তরা বিশেষ ফল লাভ করেন।
ভক্তি ও একাগ্রতা: পূজার সময় একাগ্রতা এবং ভক্তির সঙ্গে পূজা করা উচিত। পূজার সময় মনোযোগী থেকে ভগবান হনুমানজির প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখা প্রয়োজন।
সংযম পালন: পূজার দিন নিরামিষ আহার গ্রহণ করা উচিত এবং অ্যালকোহল ও অন্যান্য তামসিক বস্তু এড়িয়ে চলা উচিত।
৫. উপসংহার:
হনুমান পূজা ভগবান হনুমানজির প্রতি গভীর ভক্তি প্রকাশের একটি পবিত্র প্রক্রিয়া। এই পূজার মাধ্যমে ভক্তরা সাহস, শক্তি, এবং মনোবল লাভ করতে পারেন। সঠিক নিয়ম এবং পদ্ধতি অনুসরণ করে পূজা করলে ভগবান হনুমানজির আশীর্বাদ সহজেই লাভ করা সম্ভব। পূজা করার সময় ভক্তি ও বিশ্বাসের সঙ্গে তাঁকে স্মরণ করা উচিত, যাতে পূজার সমস্ত ফলাফল পূর্ণভাবে প্রাপ্ত হয়।
Post a Comment