২০ জন মিলে করেছিল ধর্ষণ, তারপরেই মেয়েটি হয়ে গেল ডাকাত

This is a AI Generated Image. No Living person look like this.

ফুলন দেবী ছিলেন একজন ভারতীয় ডাকাত এবং পরে রাজনীতিবিদ, যিনি "ব্যান্ডিট কুইন" নামে পরিচিত ছিলেন। তার জীবন কাহিনী বিশেষ করে তার সংগ্রাম, নৃশংসতা এবং সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে তার প্রতিশোধ নেওয়া, তাকে ভারতের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিতর্কিত চরিত্র করে তুলেছে।

ফুলন দেবীর জন্ম হয়েছিল ১৯৬৩ সালে উত্তর প্রদেশের একটি দরিদ্র মল্লাহ (নৌকা বাইচ শ্রমিক) পরিবারে। তার শৈশব ছিল কষ্টকর এবং নির্যাতনে ভরা। মাত্র ১১ বছর বয়সে তাকে এক প্রৌঢ়ের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। সেই বিবাহিত জীবনে ফুলন দেবী বর্বর নির্যাতনের শিকার হন। তার স্বামী তাকে প্রায়ই নির্যাতন করত এবং ধর্ষণ করত। অবশেষে, তিনি স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে আসেন এবং নিজের গ্রামে ফিরে আসেন।

কিন্তু গ্রামের জীবনেও তিনি শান্তি পাননি। ফুলন দেবী তার নিজের সমাজের লোকদের দ্বারাও অত্যাচারিত হন। তাকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করে গ্রেফতার করা হয়, এবং পুলিশ হেফাজতে তাকে অত্যাচার করা হয়। এ সময় তিনি ডাকাত দলের সাথে যুক্ত হন এবং একটি ডাকাত দলের নেতা বিক্রম মাল্লাহের সান্নিধ্যে আসেন। বিক্রমের সাথে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তিনি ডাকাত দলের সদস্য হিসেবে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।

ফুলন দেবীর জীবনের সবচেয়ে দুঃসহ অভিজ্ঞতা ছিল বেহমাই গ্রামের ঘটনাটি। ১৯৮০ সালে একদল ঠাকুর ফুলন দেবীকে অপহরণ করে এবং তাকে গ্রামে নিয়ে গিয়ে একের পর এক ধর্ষণ করে। বেহমাই গ্রামের ঠাকুরদের হাতে ফুলন দেবী প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে নির্মম নির্যাতন ও গণধর্ষণের শিকার হন। ঠাকুররা তাকে বারবার ধর্ষণ করে এবং মানসিক ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।



এই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা ফুলন দেবীর মনে প্রবল ক্ষোভ এবং প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে দেয়। বেহমাইয়ের এই ঘটনার পর ফুলন দেবী পালিয়ে আসেন এবং বিক্রমের সাহায্যে তিনি তার শক্তি পুনরায় সংগঠিত করেন। তিনি প্রতিশোধ নেওয়ার সংকল্প করেন এবং তার নেতৃত্বে ডাকাত দল ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেহমাই গ্রামে আক্রমণ চালায়। এই হামলায় ২০ জন ঠাকুর পুরুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়, যা ভারতের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত এবং বিতর্কিত ঘটনা হয়ে ওঠে।

বেহমাই হত্যাকাণ্ডের পর ফুলন দেবী ভারতের জাতীয় আলোচনায় আসেন। তিনি ডাকাত দলের নেত্রী থেকে "ব্যান্ডিট কুইন" নামে পরিচিত হন। তার ধর্ষণ এবং তার প্রতিশোধের ঘটনা ভারতীয় সমাজের বর্ণ বৈষম্য এবং নারীদের প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে একটি প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।

ফুলন দেবীর ধর্ষণ এবং তার জীবনের এই মর্মান্তিক অধ্যায় তাকে একটি প্রতিবাদী চরিত্রে পরিণত করে। তার জীবনকাহিনী সমাজের শোষিত এবং অবহেলিত মানুষদের জন্য একটি উদাহরণ, যেখানে তিনি তার উপর হওয়া নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে প্রতিশোধ গ্রহণ করেছিলেন। ফুলন দেবীর এই কাহিনী একদিকে যেমন নারীদের প্রতি সমাজের অমানবিকতা প্রকাশ করে, অন্যদিকে তা সংগ্রামের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়, যা তার জীবনকে ইতিহাসের পাতায় অমর করে তুলেছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.