সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপূজা কলকাতার প্রাচীনতম দুর্গাপুজোর মধ্যে একটি এবং এর ইতিহাস ১৬০০ শতকের শেষের দিকে পৌঁছে যায়। এই পূজা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি কলকাতার ইতিহাসের সাথেও গভীরভাবে যুক্ত। সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার কলকাতার জমিদার বংশ হিসেবে পরিচিত, এবং তাদের সঙ্গে কলকাতার ব্রিটিশ শাসনের প্রথম দিকের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও জড়িত।
পুজোর সূচনা
সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপূজার শুরু হয় ১৬১০ সালে, তখন সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার তাদের জমিদারির অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই পুজো শুরু করেছিলেন লক্ষ্মীকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, যিনি পরবর্তীতে ‘রায়চৌধুরী’ উপাধি গ্রহণ করেন। সাবর্ণ পরিবার মূলত হুগলির কাছে বারিশার জমিদার ছিলেন, পরে তারা কলকাতার বিভিন্ন অংশে তাদের প্রভাব বিস্তার করেন। বলা হয়, তারা দুর্গাপূজা শুরু করেছিলেন নিজেরা ও পরিবারের মঙ্গল কামনার উদ্দেশ্যে।
ব্রিটিশদের সাথে সম্পর্ক
সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে কলকাতার জমি বিক্রি করেন। ১৬৯৮ সালে ব্রিটিশরা সাবর্ণ পরিবারের কাছ থেকে কলকাতার তিনটি গ্রাম – সুতানুটি, গোবিন্দপুর, এবং কলিকাতা (কলকাতা) – কিনে নেয়, যা পরে ব্রিটিশ কলকাতা শহর গঠনের মূল ভিত্তি হয়। সেই সময় থেকেই এই পূজার মাহাত্ম্য ও প্রভাব আরো বাড়তে থাকে।
পূজার বৈশিষ্ট্য
সাবর্ণ রায়চৌধুরীর দুর্গাপূজার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, এটি বেশ ঐতিহ্যবাহী এবং আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালিত হয়। পুজোটি বারিশা, বেহালা, এবং এর আশেপাশের এলাকায় বিভিন্ন অংশে এখনও পালিত হয়। মূল পুজোর পাশাপাশি, এখানে নানা ধরনের সংস্কৃতির অনুষ্ঠান এবং পুরনো প্রথাগুলি অনুসরণ করা হয়। সাবর্ণ পরিবারের পুজোতে বেশ কিছু প্রাচীন রীতি যেমন 'কুমারী পূজা' এবং বিশেষ ধরনের চণ্ডীপাঠ অনুষ্ঠিত হয়।
পুজার ধারাবাহিকতা
আজও সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের বংশধরেরা এই পূজার আয়োজন করেন এবং প্রায় ৪০০ বছরের এই ঐতিহ্য আজও অব্যাহত রয়েছে। পরিবারের বিভিন্ন শাখা বিভক্ত হলেও, প্রতিটি শাখা আজও তাদের পূর্বপুরুষদের দেখানো পথে দুর্গাপূজা পালন করে চলেছে।
সাবর্ণ রায়চৌধুরীর এই দুর্গাপূজা কেবল ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি কলকাতার ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা শহরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচিতির একটি বড় অংশ।
Post a Comment