হো চি মিন নগর, কলকাতা শহরের এই পুজো দেখেছে গ্রাম থেকে শহরের বিবর্তন

নিজস্ব সংবাদদাতা: ভিয়েতনামের সায়গন নদীর তীরে যখন মরণ সংগ্রাম চালাচ্ছেন হো চি মিন, তখন তিনি কি ভেবেছিলেন কয়েক হাজার মাইল দূরে ভারতের কলকাতা শহরের একটা এলাকায় কিছু মানুষ জনবসতি গড়ে তুলবে আর তার নাম হবে 'হো চিন মিন নগর'? বেহালা চৌরাস্তা থেকে বীরেন রায় রোড (ওয়েস্ট) ধরে এগিয়ে এলেই 'শহর কলকাতা' থেকে 'গ্রাম বাংলা'র বিবর্তন আজও আপনার চোখে পড়বে। এখানে এখনও 'পাড়া' কালচার আছে। এখানে এখনও সব বাড়ি ভেঙে ফ্ল্যাট হয়ে যায়নি। বার্ধক্যে জর্জরিত কিছু পুরনো বাড়ি আজও রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে আছে। শকুনতলা বাস স্টপ অতিক্রম করেই ডান হাতে নেতাজির মূর্তির পাশের রাস্তাটিই হল হো চি মিন নগর।

সেই 'হো চিন মিন' নগরেই ১৯৯৫ সালে শুরু হয়েছিল ছোট্ট একটা পুজো। তখন এখানে ছিল কাঁচা মাটির রাস্তা আর গুটি কয়েক মানুষের বসতি। তারপর কলকাতা শহরের ব্যাপ্তি গিলে খেল ছোট জনপদগুলিকে। কখন যে ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন ও কমার্সিয়ালাইজেশন শহরের বুকে জন্ম দিল 'কর্পোরেট ইনহ্যাবিটেন্সি', তা কেউ বুঝতেই পারলো না। আর তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বড় হতে থাকলো এই দুর্গাপুজো। দেখতে দেখতে তিন দশক কেটে গেল।  কলকাতা শহরের আর পাঁচটা বড় পুজোর মতো বাহুল্য হয়তো কোনও দিনই ছিল না এবং আজও নেই। কিন্তু যেটা আছে সেটা হল আবেগ ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা। 

হো চি মিন নগর অধিবাসী বৃন্দের ২০২৩ সালের প্রতিমা

বড় কোনও স্পনসর নেই, বড় কোনও সাহায্য নেই। কিন্তু এই হো চি মিন নগর অধিবাসী বৃন্দের পুজো চালিয়ে যাচ্ছে গুটি কয়েক উদ্যোগী মানুষ। এই পুজোর সভাপতি অতীন দে জানালেন, পুজোর সূচনা লগ্নেও তাঁরা ভাবেন নি এতগুলো বছর এভাবে অতিক্রম হবে। তিনি আরও জানান এই পুজো কোনও দখলের জায়গাতে হয় না। এটি পুজো কমিটির কেনা জমিতে হয়। দিলীপ দত্ত এই পুজোর চেয়ারম্যান। আর এই পুজো যাঁর ছাড়া সম্ভব ছিল না তিনি হলেন পঙ্কজ সরকার। বাইরে কোনও এলাকায় চাঁদা তুলতে উদ্যোক্তারা যান না। তাঁরা নির্ভর করেন এই এলাকার বাসিন্দাদের ওপরেই। যদিও সময়ের সঙ্গে এই হো চি মিন নগরে গড়ে উঠছে বহু নতুন ফ্ল্যাট। বসবাস করতে আসছেন বাইরে থেকে আসা মানুষেরা। ফলে অর্থনৈতিক পরিবর্তনও এই এলাকায় দ্রুততার সঙ্গে ঘটছে। 

পুজোর উদ্বোধন করছেন অভিনেতা সুদীপ মুখোপাধ্যায়

এই বছরও এই পুজো করছেন উদ্যোক্তারা। এবার শ্বেত শুভ্র সাজে এসেছেন মা মহামায়া। এবারে তাদের পুজোর উদ্বোধন করে গেলেন অভিনেতা সুদীপ মুখোপাধ্যায়। প্রতি বছরের মতো এবারও পুজোর দিনগুলিতে গড়ে ৪০০ লোক খাবেন এখানে। মূলত সাবেকি সাজেই এখানে আসেন মা দুর্গা। পুজোর দিনগুলিতে এই পাড়ার মানুষেরা এক জায়গায় মিলিত হয়ে দেবীর আরাধনা করেন। সদ্য পুজোর উদ্যোক্তারা এখানে একটি শিব মন্দির ও কালী মন্দির গড়ে তুলেছেন। সেখানে নিত্যপুজো হয়। 

কলকাতার বুকে এভাবেই চলতে থাকুক এই আবেগ ও উদ্যোমে ভরপুর এই পুজোগুলি। উৎসবের দিনগুলিতে এভাবেই মনে প্রাণে থাকুক সবাইকে নিয়ে এগিয়ে চলার ইচ্ছে।


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.