বসন্ত পঞ্চমীতেই সেজে ওঠেন এই সুফি সাধক, হিন্দু-মুসলমানের মিলন ক্ষেত্র

 

প্রতি বসন্তে, দিল্লির নিজামুদ্দিন দরগাহ মেতে ওঠে বসন্ত পঞ্চমীর আনন্দে, যা সুফি সাধক হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া ও তাঁর প্রিয় শিষ্য কবি আমির খুসরোর স্মৃতিকে জীবন্ত করে তোলে। এই উৎসবের সূচনা একটি হৃদয়স্পর্শী ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। নিজামুদ্দিন আউলিয়ার ভাগ্নের মৃত্যুতে তিনি গভীর শোকে মগ্ন ছিলেন। তাঁর মনোবেদনা লাঘব করতে, আমির খুসরো বসন্ত পঞ্চমীর দিনে হলুদ পোশাক পরে, সরষে ফুল হাতে গান গাইতে গাইতে গুরুর সামনে উপস্থিত হন। এই আনন্দময় পরিবেশে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার মুখে প্রথমবারের মতো হাসি ফুটে ওঠে।

এই ঘটনার পর থেকে, প্রতি বছর বসন্ত পঞ্চমীতে নিজামুদ্দিন দরগাহতে বিশেষভাবে এই উৎসব পালিত হয়। সকল ধর্মের মানুষ এই দিনে দরগাহতে সমবেত হয়ে বসন্তের গান ও কাওয়ালি পরিবেশন উপভোগ করেন। সকলের পরনে থাকে বাসন্তী রঙের পোশাক, হাতে সরষে ফুল, যা সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের প্রতীক। এই উৎসবের মাধ্যমে দিল্লির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির সুন্দর প্রকাশ ঘটে।

আমির খুসরো ছিলেন মধ্যযুগের ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতজ্ঞ, কবি ও সুফি সাধক। তিনি ফার্সি ও হিন্দি ভাষায় অসংখ্য গান ও কবিতা রচনা করেছেন এবং ভারতীয় সঙ্গীতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর সৃষ্টিকর্ম আজও সঙ্গীতপ্রেমীদের মুগ্ধ করে।

সম্প্রতি দিল্লিতে 'জাহান-এ-খুসরো' নামক সুফি সঙ্গীত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমির খুসরোর ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, আমির খুসরো তাঁর সময়ে ভারতকে বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর চেয়েও শ্রেষ্ঠ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং সংস্কৃত ভাষাকে বিশ্বের সেরা ভাষা হিসেবে অভিহিত করেছেন।

দিল্লির বসন্ত উৎসব ও আমির খুসরোর সৃষ্টিকর্ম আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মূল্যবান অংশ, যা আজও আমাদের সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের পথে অনুপ্রাণিত করে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.